অব্যবহৃত বিমানবন্দর গুলো চালু হলে দেশের আকাশপথ শক্তিশালী হবে

লেখক: Md Rahad Ali Sarker
প্রকাশ: ৭ মাস আগে

বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের বাজার দিন দিন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে চলেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৯ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করবে, যার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছর থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ হবে।এভিয়েশন খাতের বাজার নিয়ে কথা হয়েছে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনস এর মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম এর সঙ্গে।

বাংলাদেশে এভিয়েশন খাতের বাজার কত? এ খাতের মৌলিক সংকটগুলো কী?

বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতের বাজারের আকার উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ২০২৯ সালের মধ্যে ২ দশমিক ৩০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব আয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যার বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার চলতি বছর থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ হবে। দেশীয় উড়োজাহাজ সংস্থাগুলোর সম্প্রসারণ এবং উড়োজাহাজে ভ্রমণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা, বিশেষ করে অবসর ও ছুটির উদ্দেশ্যে এ বৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে রয়েছে। ২০২৪ সালে বাজারটি ছিল প্রায় ১ দশমিক ৪০ বিলিয়ন ডলারের।

এভিয়েশন খাত মৌলিক কিছু সংকট নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অতিরিক্ত অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ, আন্তর্জাতিক বাজারের তুলনায় দেশীয় মার্কেটে জেট ফুয়েলের অতিরিক্ত মূল্য, এয়ারক্রাফট ও এয়ারক্রাফটের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের ওপর অতিরিক্ত ট্যাক্স আরোপ। বিমানবন্দর ব্যবহারে যাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত চার্জ, পরিশেষে ৭২ শতাংশ সারচার্জ, যা এ খাতকে অগ্রসর হতে বাধাগ্রস্ত করছে। এসবই বিগত ২৮ বছরের প্রাইভেট এয়ারলাইনসের অগ্রযাত্রায় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে বিবেচিত।

সামনের দিনে যাত্রীসেবা নিয়ে আপনাদের পরিকল্পনা কী?

এভিয়েশন সেক্টরে যাত্রীদের প্রধান চাহিদা থাকে অনটাইম ফ্লাইট পরিচালনার বিষয়টি। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশের বেশি ফ্লাইট অনটাইম ফ্লাইট সূচি মেনেই পরিচালনা করেছে। ইনশাআল্লাহ এ ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সামনের দিনগুলোয় ফ্লাইট পরিচালনা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিভিন্ন রুটে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক ভাড়ায় প্রতিযোগিতামূলক সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। অভ্যন্তরীণ রুটের মতো আন্তর্জাতিক রুটেও ব্র্যান্ড নিউ এয়ারক্রাফট দিয়ে যাত্রীদের সেবা দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।

বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ আকাশপথে যাত্রী সংখ্যা বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির এ হার ধরে রাখতে বা আরো বাড়িয়ে নিতে সরকারের কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন?

গন্তব্যে ভেদে অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশপথে যাত্রী সংখ্যার তারতম্য দেখা যায়। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, সৈয়দপুর রুটে কিছুটা বাড়লেও যশোর, বরিশাল রুটে আগের তুলনায় যাত্রী সংখ্যা কমেছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন। অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রীপ্রতি বিভিন্ন ট্যাক্স আগের তুলনায় বেশি হওয়ায় যে পরিমাণ যাত্রী বৃদ্ধির সম্ভাবনা ছিল সে পরিমাণ বাড়েনি। অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য ব্যবহৃত জেট ফুয়েলের জন্য আন্তর্জাতিক রুটের তুলনায় অতিরিক্ত ১৫ শতাংশ ভ্যাট গুনতে হয়, যার প্রভাব ভাড়ার ওপরও পড়ে। দিন শেষে যাত্রী প্রবৃদ্ধি লোপ পায়। বাংলাদেশে এখনো অনেকগুলো অব্যবহৃত বিমানবন্দর রয়েছে। সেই বিমানবন্দরগুলো চালু করে দেশের আকাশপথকে আরো শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে। বিমানবন্দরগুলোকে ব্যবহার উপযোগী করলে দেশের অর্থনীতির ওপর পজিটিভ প্রভাব পড়বে বলেই আমার মনে হয়।

প্রবৃদ্ধি বাড়াতে এয়ারলাইনসগুলোকেও নিশ্চয়ই অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে?

যাত্রীদের আস্থা অর্জনের জন্য এয়ারলাইনসগুলো প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশে গত ২৮ বছরে আট-নয়টি এয়ারলাইনস বন্ধ হয়ে গেছে। বিভিন্ন এয়ারলাইনস বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু তাদের বন্ধ হওয়ার মিছিলে যুক্ত হওয়ার পেছনে বেশকিছু পলিসিগত সমস্যা আছে। এ সমস্যাগুলো থেকে যতদিন পর্যন্ত বের হওয়া না যাবে, ততদিন বাংলাদেশ এভিয়েশন অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে না। সব ক্ষেত্রেই জাতীয় বিমান সংস্থার সঙ্গে বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড থাকতে হবে। অতিরিক্ত অ্যারোনটিক্যাল চার্জ, নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ নির্ধারণ থেকে বিরত থাকতে হবে, জেট ফুয়েলের মূল্য নির্ধারণে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে কোনোভাবেই যাত্রীর ভাড়ার ওপর তার প্রভাব না পড়ে। তাহলেই এয়ারলাইনসগুলো প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা করতে পারবে।

এভিয়েশন খাতে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল কি আমাদের আছে?

বর্তমানে বাংলাদেশ এভিয়েশনে প্রচুর এক্সপেরিয়েন্সড লোকবল আছে, কিন্তু এক্সপার্ট বা বিশেষজ্ঞ লোকবলের অভাব রয়েছে। বেসরকারি এয়ারলাইনসের যাত্রাপথে জিএমজি, ইউনাইটেড, রিজেন্ট, বেস্ট এয়াররের মতো আট-নয়টি এয়ারলাইনস বন্ধ হওয়ার কারণে অনেকেই মাঝপথে এভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি ছেড়ে ভিন্ন কোনো খাতে চলে যেতে বাধ্য হয়েছে। বর্তমানে জাতীয় বিমান সংস্থা ছাড়া ইউএস-বাংলা, এয়ার অ্যাস্ট্রা, নভোএয়ার বাংলাদেশের আকাশ পরিবহনকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। এ খাতের উন্নয়নের জন্য টেকসই অবকাঠামো প্রয়োজন, যা দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে পারে।

অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনায় অসম প্রতিযোগিতার কথা প্রায়ই শোনা যায়। এ অসম প্রতিযোগিতা কীভাবে হচ্ছে? এতে কি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে?

ঠিক অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট পরিচালনায় নয়, সার্বিক এভিয়েশন সেক্টরে অসম প্রতিযোগিতা বিদ্যমান। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দেখেছি, জাতীয় বিমান সংস্থার কাছে হাজার হাজার কোটি টাকা বাকি পড়ে আছে, একমাত্র জেট ফুয়েল প্রোভাইডার পদ্মা অয়েল কোম্পানি জাতীয় বিমান সংস্থার কাছে প্রচুর অর্থ পাওনা রয়েছে। অথচ চলমান বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোর টিকে থাকার জন্য বেবিচক ও পদ্মা অয়েলের পাওনা সময়মতো পরিশোধ না করার বিকল্প নেই। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য বাংলাদেশ বিমানকে নতুন নতুন এয়ারক্রাফট সংগ্রহ করার জন্য সরকার নিজেই সহযোগিতা করে। অথচ বেসরকারি এয়ারলাইনসগুলোকে নিজেদের টিকিয়ে রাখতে নিজেদেরই স্বাবলম্বী করে তুলতে হয়। এভিয়েশন সেক্টরে টিকে থাকার যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে আজ অনেকগুলো এয়ারলাইনস ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।

বাংলাদেশ এভিয়েশন হাবে পরিণত হতে চায়। লক্ষ্য বাস্তবায়নে বাংলাদেশ কি সঠিক পথে রয়েছে?

ভৌগোলিকভাবেই বাংলাদেশ একটি সুন্দর অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও আমরা সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। আমাদের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। আমাদের প্রায় ৫৫টি দেশের সঙ্গে এয়ার সার্ভিস এগ্রিমেন্ট রয়েছে, কিন্তু আমরা ফ্লাইট পরিচালনা করছি মাত্র ২১-২২টি দেশে। বিমান বাংলাদেশ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসসহ সব এয়ারলাইনসের রয়েছে ৫৫টির মতো এয়ারক্রাফট, যা বাংলাদেশের যাত্রীর তুলনায় খুবই অপ্রতুল। একটি ব্যয়বহুল থার্ড টার্মিনাল বানানোর পরও এক্ষেত্রে খুব বেশি কার্যকর ফলাফল দেখতে পাচ্ছি না। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ইনডিপেনডেন্ট রানওয়ে থাকায় এ বিমানবন্দর থেকে পর্যাপ্ত আউটপুট পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

জাতীয় বাজেটে সরকারের কাছে আপনাদের প্রত্যাশা কী?

আমরা চাই যাত্রী ও ব্যবসাবান্ধব বাজেট, যাতে বাংলাদেশের এভিয়েশনের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর হয়ে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো তাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে। সেই সঙ্গে ট্যুরিজম, হোটেল ইন্ডাস্ট্রি অগ্রসরমান ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে পরিগণিত হতে পারে।

  • ইউএস বাংলা
  • বিমানবন্দর