মুহূর্তেই বদলে যায় একটি ব্যস্ততম বিমানবন্দরের চিত্র— থেমে যায় রানওয়ের গর্জন, নিস্তব্ধ চেক-ইন কাউন্টার, যাত্রীরা হয়ে ওঠেন উদ্বিগ্ন। এই ধরনের পরিস্থিতি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি নয়, এটি এক অদৃশ্য আঘাত—সাইবার হামলা।
ডিজিটাল প্রযুক্তিনির্ভর এই যুগে সাইবার হামলা এখন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বড় হুমকি। এটি এমন এক অবৈধ প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে হ্যাকাররা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ডিজিটাল সিস্টেমে প্রবেশ করে তথ্য চুরি, পরিবর্তন, প্রকাশ, নিষ্ক্রিয় বা ধ্বংস করে। এ ধরনের অপরাধকে বলা হয় সাইবার ক্রাইম। এতে আক্রান্ত হয় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো, এমনকি ব্যক্তিগত তথ্যও। হ্যাকাররা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে অনুপ্রবেশ করে সিস্টেম বিকল করে দিতে পারে, যার পরিণতি হতে পারে ভয়াবহ।
বিমানবন্দর হলো একটি দেশের গেটওয়ে বা প্রবেশদ্বার। সেখানে অস্থিরতা সৃষ্টি করলে পুরো দেশই অচল হয়ে পড়তে পারে। ফলে হামলাকারীরা প্রায়শই বিমানচলাচল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে—বিশেষ করে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সিস্টেমে বিঘ্ন ঘটালে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ে। অনেকে তথ্য চুরি করতেই হামলা চালায় যেমন—যাত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য, পাসপোর্ট ডেটা ও কর্মীদের সংবেদনশীল নথি হাতিয়ে নেওয়া লক্ষ্য। আর্থিক উদ্দেশ্যেও হামলা হয়ে থাকে—সিস্টেম লক করে মুক্তিপণ দাবি করা, যা র্যানসমওয়্যার নামে পরিচিত। এছাড়াও ফ্লাইট বিলম্ব, চেক-ইন ব্যাহত বা ব্যাগেজ হ্যান্ডলিংয়ে গোলযোগ সৃষ্টি করেও বিমানবন্দরকে অচল করা হয়।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টা বিমানবন্দরে অনলাইন সেবা বন্ধ করে দেয় হ্যাকাররা এবং মুক্তিপণ হিসেবে কয়েক লাখ ডলার দাবি করে। ২০২০ সালে ইরানের শহীদ বেহেশতি বিমানবন্দরে সরকারবিরোধী বার্তা প্রদর্শন করে হ্যাকাররা। ২০২৫ সালে পোল্যান্ডের একটি বিমানবন্দরে ফ্লাইট প্ল্যান সিস্টেমে হামলার ফলে ১০টি ফ্লাইট বাতিল করতে হয়।
সম্প্রতি ইউরোপের বেশ কয়েকটি প্রধান বিমানবন্দর যেমন লন্ডনের হিথ্রো, ব্রাসেলস, এবং বার্লিন সাইবার আক্রমণের শিকার হয়। চেক-ইন ও বোর্ডিং সিস্টেম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কলিন্স অ্যারোস্পেসে হামলার ফলে শত শত ফ্লাইট বাতিল হয়, ভোগান্তিতে পড়েন হাজারো যাত্রী।
সর্বশেষ বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের-বেবিচকের নিজস্ব ওয়েবসাইটেও একটি সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে। বড় ক্ষতি না হলেও বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়।
এর পরপরই দেশের সব বিমানবন্দরে জরুরি সতর্কতা জারি করেছে বেবিচক। সম্ভাব্য সাইবার হামলা প্রতিরোধে দেওয়া হয়েছে ১০ দফা নির্দেশনাও। এর মধ্যে রয়েছে—শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার, সন্দেহজনক ই-মেইল এড়িয়ে চলা, নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট, মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (এমএফএ) সক্রিয় রাখা, এবং যেকোনো সমস্যা দেখা দিলে জাতীয় সাইবার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমকে দ্রুত অবহিত করার মত নির্দেশনাও।
