চেক ইন রিপোর্ট II
ভৌগলিক অবস্থান, বিশাল জনসংখ্যা ও সারাবিশ্বে কর্মরত প্রবাসীর সংখ্যা বিবেচনায় এই অঞ্চলের এভিয়েশন হাব হওয়ার সম্ভাবনার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। বিশ্বের অন্যতম বিমান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের জরিপ বলছে, বিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে আকাশপথের যাত্রী প্রবৃদ্ধি ৫০ শতাংশ বেশি। এই প্রবৃদ্ধি সামাল দিতে ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের এয়ারলাইন্সগুলোর কমপক্ষে ১৬০টি উড়োজাহাজের প্রয়োজন হবে। এছাড়াও দরকার হবে আধুনিক বিমানবন্দর, শক্তিশালী আকাশ নজরদারি ব্যবস্থা, দক্ষ জনশক্তি, বিদেশি বিনিয়োগ, পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও সমৃদ্ধ এয়ারলাইনস কোম্পানি।
এরই মধ্যে সেসব লক্ষ্য পূরণে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যার সবচে বড় নিদর্শন শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল। এই টার্মিনালে একসাথে ৩৭ টি উড়োজাহাজ পার্ক করা যাবে। আছে দুটি হাইস্পিড র্যাপিড এক্সিট ট্যাক্সিওয়ে। বহির্গমনে ৬৪ ও আগমনী যাত্রীদের জন্য ৬৪টি ইমিগ্রেশন কাউন্টার, ২৭টি ব্যাগেজ স্ক্যানিং মেশিন, ১১টি বডি স্ক্যানার, ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ ও ১৬টি লাগেজ বেল্ট।
বর্তমানে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বছরে ৮০ লাখ যাত্রী সেবা দিতে সক্ষম। থার্ড টার্মিানাল চালু হলে সেই সক্ষমতা বেড়ে বছরে দুই কোটিতে গিয়ে পৌঁছাবে। প্রতিদিন ৫০০ এর মতো ফ্লাইট চলাচলের সক্ষমতা অর্জন করবে দেশের প্রধান এই বিমানবন্দর। এছাড়াও সম্প্রসারণ কাজ চলছে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, রাজশাহী সৈয়দপুরসহ সকল বিমানবন্দরেই।
ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে ফ্লাইট চালাতে ও অ্যাভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে বড় বড় দেশ। যার মধ্যে ৪ টি এয়ারলাইন্স সম্প্রতি ফ্লাইট পরিচালনা শুরু করেছে। সেগুলো হলো মিশরের ইজিপ্ট এয়ার, দক্ষিণ কোরিয়ার এয়ার প্রিমিয়া, শ্রীলংকার ফিটস এয়ার ও চীনের এয়ার চায়না। আর অনুমোদন নিয়ে ফ্লাইট পরিচালনার অপেক্ষায় আফ্রিকার ইথিওিপিয়ান এয়ারলাইন্স ও রয়েল ব্রুনাই এয়ারলাইন্স।
দুবাইয়ের উইজ এয়ার, মালয়েশিয়ার মাই এয়ারলাইন্স আবেদন করেছে ফ্লাইট পরিচালনার। তালিকায় আছে মুখ ফিরিয়ে নেয়া ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, কোরিয়ান এয়ারও। এছাড়া আগ্রহ দেখিয়ে সিভিল অ্যাভিয়েশনকে চিঠি দিয়েছে ইন্দোনেশিয়ার গারুদা, ইরাকি এয়ারওয়েজ ও জর্দানের রয়াল জর্দানিয়ান।
এদিকে কয়েকবছর ধরেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনালে এয়ারলাইন্স বাংলাদেশের সিভিল অ্যাভিয়েশনের সাথে যোগাযোগ করছে। পিআইএর প্রস্তাব বাংলাদেশে ফ্লাইট চালু করলে দেশের যাত্রীরা করাচিতে ট্রানজিট নিয়ে সহজেই ইরান, ইরাক, সৌদি আরব, ওমান, ইয়েমেন, উজবেকিস্তান, তুরস্কসহ আশপাশের দেশগুলোতে যেতে পারবে। যদিও এয়ারলাইন্সটিকে ডিপ্লোম্যাটিক চ্যানেলে যোগাযোগ করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আবেদনের কথা বলেছে বাংলাদেশ। সবমিলে ডজন খানেক এয়ারলাইন্স মুখিয়ে আছে বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য।
এছাড়াও বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অ্যাভিয়েশন খাতে বিনিয়োগ করতে চায় ১০ টি দেশ। সম্প্রতি ৫৯তম ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) সম্মেলনে বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় তারা এ আগ্রহের কথা জানিয়েছে। ১৪ অক্টোবর থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত ফিলিপাইনে ডিজিসিএ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ফ্রান্স, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়াসহ ৩৯টি দেশের চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক ও তাদের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া ১১টি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিও ছিলেন। সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।
এই সম্মেলনেই সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যানের সাথে বৈঠক করে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, চীন, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কোরিয়া, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ফ্রান্স এবং জাপান। বৈঠকে দেশগুলো বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করে। এছাড়া তারা বাংলাদেশের অ্যাভিয়েশন খাতকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে সেবা সহজীকরন সহায়তা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে আগ্রহ দেখান।
অথচ বাংলাদেশ নিরাপদ নয়, এমন অজুহাতে একসময় বেশকিছু বিদেশি এয়ারলাইন্স মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলো, গুটিয়েছিলো ব্যবসা। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ, কোরিয়ান এয়ার, ফ্লাই দুবাই, গালফ এয়ারের মতো এয়ারলাইন্স ছিলো সেই তালিকায়। সেই অনিরাপদ বাংলাদেশ এখন বিনিয়োগের নতুন ক্ষেত্র। উঠে এসেছে বিশ্ব এয়ারলাইন্স ব্যবসায় লাভজনক দেশের তালিকায়।
