দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২৭ এপ্রিল চালু হচ্ছে এ কার্গো ফ্লাইট।এদিন সন্ধ্যা সাতটায় ৬০ টন পণ্য নিয়ে সিলেট থেকে স্পেনের উদ্দেশে উড়াল দিবে বিমানের একটি কার্গো ফ্লাইট।এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
এসময় সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেন,কার্গো কমপ্লেক্স ও টার্মিনাল আগে থেকেই প্রস্তুত করা হয়েছে। সম্প্রতি ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। ২৭ এপ্রিলের ফ্লাইটের জন্য বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারসহ সবধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া জানান, পণ্য রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ভোগান্তির কথা মাথায় রেখে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ বিমানের এইচএসআইএ কার্গো ভিলেজ পরিচালক শাকিল মেরাজ জানান, এটি যেহেতু ইউরোপ-ভিত্তিক একটি ফ্লাইট, তাই সেখানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সিকিউরিটি রেগুলেশন এন্ড সেফটি কমপ্লায়েন্স মেনে সবকিছু করা হবে। যাচাই-বাছাই করে সার্টিফায়েড জনবল দিয়ে পরিবহন করার জন্য আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। সিলেট বিমানবন্দরের বর্তমান যে কার্গো অবকাঠামো আছে সেখানে যন্ত্রপাতি ও জনবলের বিষয়টাও বাংলাদেশ বিমান দেখছে।
এমন সময় এই উদ্যোগ এলো, যখন ভারত তাদের ভূখণ্ড ব্যবহার করে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করেছে। ভারতের এ নির্দেশনা স্থগিতের চেষ্টা বা পাল্টা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে নিজেদের সামর্থ্য বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।
অবশ্য সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগে আগে থেকেই নেওয়া হচ্ছিল বলে জানিয়েছে বেবিচক কর্মকর্তারা। প্রবাসী অধ্যুষিত এই অঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে থাকায় সেখানে কাঁচা সবজির চাহিদা বেশি।
সিলেট অঞ্চলের শাক-সবজি, আনারস, লেবুজাতীয় ফল, সাতকড়া, পান, ফ্রোজেন ফিস, সুগন্ধি চাল, বেতের আসবাবপত্র, নকশিকাঁথা এবং কুটির শিল্পের বিশাল বাজার রয়েছে ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যে। বিগত ৬ বছর ধরে সিলেট থেকে কার্গো ফ্লাইট বন্ধ থাকায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সেই পণ্য পাঠাতেন রপ্তানিকারকরা। তাই, এখানে ফ্লাইট চালুর দাবি জোরালো হচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে।
গত জানুয়ারি মাসে ঢাকায় বলাকা ভবনে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. মো. সাফিকুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দ্রুত কার্গো ফ্লাইট চালুর দাবি জানান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী। অতীতে শেখ হাসিনার আত্মীয় শেখ কবির হোসেনের কারণে এই ফ্লাইট বন্ধ হয়েছিল বলেও অভিযোগ করেছিলেন তিনি।
বেবিচক কর্মকর্তারা জানান, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যাটেগরি ১-এ উন্নীত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের (আইকাও) একটি প্রতিনিধি দল বিমানবন্দর দু’টি পরিদর্শন করে এ ঘোষণা দেয়। এ দুটি বিমানবন্দর দিয়ে কার্গো ফ্লাইট চালু হলে একদিকে যেমন রপ্তানিকারকদের ভোগান্তি কমবে, তেমনি বাড়তি অর্থ খরচের হাত থেকে রক্ষা পাবেন তারা। পাশাপাশি পণ্য দ্রুত আমদানিকারক দেশে পৌঁছানো যাবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশন সাব-কমিটির চেয়ারম্যান হিজকিল গুলজার বলেন, সিলেট ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে কার্গো ফ্লাইটে পণ্য পরিবহনের দাবি ছিল ব্যবসায়ীদের। সেই দাবি পূরণ হতে চলছে জেনে আমরা খুবই আনন্দিত।
সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানান, দেশে আটটি কার্গো এয়ারলাইন্সের কার্যক্রম চলছে। এর সবই ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পরিচালিত হয়।
তবে, সিলেটে প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণ না হলে সিলেট বা আশপাশের জেলাগুলোর রপ্তানিকারকরা খুব একটা লাভবান হবেন না বলে মনে করেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআই’র সাবেক পরিচালক খন্দরকার সিপার আহমদ। তিনি বাসস’কে বলেন, কয়েক বছর আগে ব্যবসায়ীদের দাবির প্রেক্ষিতে কার্গো কমপ্লেক্স নির্মাণ করে বেবিচক। কিন্তু, সিলেটে প্যাকেজিং হাউজ না থাকায় এটি চালু করা যাচ্ছিল না। ব্যবসায়ীরা ঢাকার শ্যামপুরে পণ্য নিয়ে প্যাকেজিং করে আবার সিলেটে এনে রপ্তানি করলে খরচ বেড়ে যাবে।তবে তিনি কার্গো ফ্লাইট চালুর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এর সুফল পেতে দ্রুত প্যাকেজিং হাউজ নির্মাণের দাবি জানান।
প্রথম ফ্লাইটে কেবল গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হলেও প্যাকেজিং হাউজ করা গেলে দেশের যে কোনো স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা সবজিসহ যে কোনো পণ্য সিলেটে নিয়ে সহজে কার্গো ফ্লাইটে পাঠাতে পারবেন। এতে খরচ ও ভোগান্তি দুটোই কমবে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীরা।
